শীতল উষ্ণতা
যতই সময় যায় ততই নাকি বাবা - মার সাথে সম্পর্কটা নাকি শীতল হয়ে আসে। এতে আসলে দোষ বাবা মার বা সন্তানের কারোরই থাকে না। জেনারেশন গ্যাপ, চিন্তা করার এঙ্গেল, ভিন্ন জিনিসকে প্রায়োরিটি দেওয়া - অনেক কিছুই দুই পাশের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের অনেক বিষয় নিয়ে রাগ লাগে বাবা-মার উপর৷ আব্বা আম্মা কেন ফোনের সিম্পল কাজগুলোও আমাদের দিয়ে করায়, ফেসবুক কেন উদ্ভটভাবে ইউজ করে, আমাদের কাজে কেন নাক গলায়, সব বিষয়ে প্যারানয়েড আচরণ, নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, অন্য কারো সামনে এমনভাবে ট্রিট করা যেটা আমাদের পছন্দ না। টেম্পারমেন্ট সবসময় ঠিক রাখাও কষ্ট কিন্তু আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিত।
আমাদের প্যারেন্টস অশিক্ষিত, আনস্মার্ট, ব্যাকডেটেড, খ্যাত, অসৎ যা কিছুই হোক না কেন আমরা কখনো তাদের চুজ করতে পারি না। তারাই আমাদের আইডেন্টিটি। আর আমাদের বাচ্চাকালে তারা যে কন্ট্রিবিউশন রেখেছেন তার জন্য আগামী ১০০ বছরও যদি প্যারেন্টস এমন কিছু করে যায় যেটা আমাদের পছন্দ না - সেটা জাস্টিফায়েড।
তখন আমরা রামপুরার উলনে থাকতাম। বাসার সামনে একটা মাঝারি সাইজের সবুজ মাঠ ছিলো, সেখানে ছাগল চড়তো। আমি আর মা বিকালে বাদাম নিয়ে নামতাম, ছাগলগুলোকে খাওয়াতাম। ছাগলগুলো বুঝতো না, বাদাম শেষ হয়ে গেলে বাদামের জন্য মায়ের উপরে ভর দিয়ে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে যেত। আমি সেটা দেখে হো হো করে হাসতাম। এমন সুন্দর একটা ছেলেবেলা আমাকে আর কে দিবে?
বাবা রাতে যখন কোর্ট থেকে ফিরতো মা আমাকে কোলে নিয়ে দরজা খুলতো। কিন্তু আমি তো ঢুকতে দিবো না। আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে হবে। ঘর্মাক্ত বাবা ফাইলগুলো রেখে আমাকে কোলে করে নিয়ে বের হতো৷ নিচের মুদির দোকান থেকে পাউরুটি কিনতাম। বাবা আমাকে নিয়ে হাটতো আমি বাবার কোলে বসে রাস্তার কুকুরগুলোকে রুটি ছিড়ে ছিড়ে খাওয়াতাম। কি ছিলো দিনগুলো!
প্রতি শুক্রবার বাবা আমাকে নিয়ে বের হতো। নাইলে কান্নাকাটি করে বাসার পরিবেশটাই দূষিত করে ফেলতাম। বের হয়ে বাসে উঠতাম। আমার বাস খুব পছন্দ ছিলো। কিন্তু আমি সব বাসে উঠতাম না। ভাঙ্গাচোরা বাস আমার পছন্দ না। তাই দেখা যেত অনেকগুলো বাস ছেড়ে দিয়ে আধাঘন্টা পর একটা সুন্দর বাসে উঠতাম। বিশ্বরোড পর্যন্ত বাস যেত, আবার ফিরে আসতো। বাচ্চা আমি এই আপ ডাউন জার্নিতেই মহা খুশি৷ বাবার কোলে করে বাসায় আসতাম।
কি সুন্দর একটা ছেলেবেলা দিয়েছে বাবা-মা আমাকে। সামনে হয়তো আরো অনেকবার তাদের উপর রাগ/বিরক্তি হবে , ভৌগলিক দূরত্ব বাড়বে কিন্তু এই স্মৃতিগুলো তো মুছবে না। কতটা ভাগ্যবান আমি, তারা আমাকে শুধু জীবনটাই উপহার দেয় নাই, সাথে সুন্দর কিছু মুহূর্তও দিয়েছে।