বিষাক্ত



১।
কুদ্দুস ডিএমপি ফোন লিস্ট থেকে লালবাগ থানায় ফোন দিলো ডুপ্লিকেট সিম দিয়ে।
"হ্যালো ওসি সাহেব?"
"বলুন"
"আমি গত পরশুদিন IEDCR থেকে CODV19 টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছি। কোয়ারান্টানে রাখা হয়েছিলো, পালিয়ে এসেছি৷ "
"আপনার কি ন্যূনতম সেন্স নেই..."
"আছে। সেন্স আছে বলেই তো আপনাকে ফোন দিলাম। এখন আমার ব্যাংক একাউন্টে যদি আগামী ২৪ ঘন্টার মাঝে ১০ কোটি টাকা ট্রান্সফার না হয়, আমি সুন্দর করে শাহবাগ দিয়ে হেটে হেটে টিএসসি যেয়ে এক কাপ চা খেয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সবগুলা লঞ্চে ঢু মেরে নিউমার্কেট থেকে জিন্সের প্যান্ট কিনবো।"
"এই বাস্টার্ড, কুত্তার বাচ্চা,...."
ওসি সাহেব গালি দিয়ে শেষ করতে পারলেন না, ওপাশ থেকে কল কেটে দেওয়ার টোন একনাগারে বেজে চলেছে।
২।
বিলকিস টিএসসিতে মাঠের অপজিটে বামের করিডোরে রীতিমত তার বয়ফ্রেন্ডের কোলে বসে আছে। বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব, দুই মিনিট পর বৃষ্টি পরলে সেই বিখ্যাত টিএসসি চুম্বনের পুনরাবৃত্তি ঘটার সমূহ সম্ভাবনা। কে বলবে চারপাশ দেখে যে দেশে একটা লকডাউন পরিস্থিতি সামনে আসন্ন।
ওসি সাহেব মাস্ক পরে হন্তদন্ত করে টিএসসি ঢুকে গেলেন। যেভাবেই হোক কুদ্দুস হারামজাদাকে খুজে বের করা লাগবে। সবগুলো ইউনিট চারদিকে ভাগ করে দিলেন। মিনিট দশেক সার্চ করে বাদিকে গিয়ে দেখেন এক জোড়া কপোত কপোতী চুম্বনরত। ওসি সাহেব কেশে উঠে বললেন "এক্সকিউজ মি"৷ বিলকিস চমকে উঠে তাকিয়ে দেখলো, তার ভাই পুলিশ ড্রেসে দাড়িয়ে আছে।
৩।
কুদ্দুসের মন মেজাজ বিশেষ ভালো না। সে ভাবতেছে ১০ কোটি টাকা দিয়ে কি করবে। আইফোনের সাথে একটা আয়না কিনে নিলে কেমন হয়! আচ্ছা দোকানদাররা তো আইফোন আয়না বান্ডেল অফার দিলেই পারে, মিরর সেলফির ষোলকলা পূর্ণ হয় তাহলে।
ফেবুতে সুন্দর একটা বার্গারের ছবি দেখে শেয়ার দিলো কুদ্দুস। বাকিরা লাভ দিলেও তার ফ্রেন্ড আফু পোস্টে এংরি দিলো। কুদ্দুস মনে মন ভাবতেছে মানুষ এত সুশীলচোদা আর ভন্ড কিভাবে হয়। যে সব পোলাপান ক্যাপিটালিস্ট বাপের খেয়ে ক্যাপটালিজমের গাড় মারে মুখের বয়ানে আর কমিউনিজম চোদায় আড্ডায় আর নিজেরে ক্যুল মনে করে এদের পুটকির ভিতর বিড়ি ভরে দেওয়া দরকার। আরে ভাই বার্গারটা ভাল্লাগছে শেয়ার দিছি, তুই যদি এখন " গরীবরা খাইতে পায় না তুই বার্গার সোদাস" মনোভাব নিয়া এংরি দেস, যা আগে নিজে মাঠে নাইমা জনসেবা কর। কামের কামে নাই সুশীল সাজতে আসে, এইগুলাই ৩০ বছর পর টকশোতে টাইম নষ্ট করবে আর সরকারের গাড় চাটবে।
৪।
বিলকিসের মন মেজাজ বিশেষ ভালো না। গতকালের বিব্রতকর পরিস্থিতির পর রুমের দরজাই আর খুলে নাই। ভাইয়াকে কিভাবে ফেস করবে এটাই ভাবতেছে। এদিকে ক্ষিদা লাগছে, ব্রেকফাস্টও করা দরকার। লেক্সাস বিস্কিটের প্যাকেট হাতে নিয়ে ল্যাপটপটা ওপেন করলো। ফেবুতে ঢুকে দেখে তার ক্লাসের হ্যান্ডসাম ছেলে একটা মুভি ওয়াচিং পোস্ট দিছে। যদিও মুভিটা সে দেখে নাই, নিচে কমেন্ট করলো, "মাইন্ড ব্লোয়িং মুভি।"
রুম থেকে বের হয়ে শুনে ভাইয়া বাসায় নাই, কাজে বের হয়েছে। ভাবী তার দিকে কেমনে চোখ কটমট করে তাকায়ে আছে। কোনমতে ব্রেকফাস্ট করে আবার রুমে আসলো। কিছুই ভাল্লাগতেছে না। যদিও মুভি দেখতে তার ভাল্লাগে না, ল্যাপটপে সরসেসির একটা মুভি চালায়ে ল্যাপটপের পিক তুলে ডে দিলো।
৫।
কুদ্দুস ওসি সাহেবকে আরেকবার ফোন দিলো।
-"ওসি সাহেব, ২৪ ঘন্টা হতে আর ২ ঘন্টাও বাকি নাই"
-" শুন, পার্সোনালি তোকে বলি, তোর মত হাজার হাজার এফেক্টেড এমনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, তুই আর এমন আহামরি ঝামেলা বাড়াবি না। তবে তুই আমাকে পার্সোনালি পেইন দিছোস, সো তোরে আমি পাইলেই এরেস্ট করবো, এরেস্ট ওয়ারেন্ট রেডি করা আছে। শালা গান্ডু জীবনে ১০ লাখ টাকা চোখে দেখছোস? আবার ১০ কোটি মারাস। ফোন রাখ"
কুদ্দুস চিন্তিত হয়ে গেলো। এভাবে তো সে ভেবে দেখে নাই। তার চেয়ে বড় কথা হলো আসলে সে COVID positive না। তাই বলে এই ব্লাফটা এভাবে মাঠে মারা যাবে ভাবে নাই।
কুদ্দুস মনের দুঃখে ফেসবুক খুলে। খুলে দেখে তার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড আরফের মুভি ওয়াচিং পোস্টে মুভি সাজেস্ট করে কমেন্ট দিছিলো তার রিপ্লাই নাই। এদিকে বিলকিস নামে এক random মাইয়ার "মাইন্ড ব্লোয়িং মুভি" কমেন্টে যে বিশাল রিপ্লাই দিছে অস্কারেও এমনে মুভি নিয়া ক্রিটিসাইজ করে কিনা সন্দেহ। কুদ্দুসের মেজাজ তখন বিপদসীমার উর্ধ্বে। ডাইনিং টেবিলে গেলো পানি খেতে। গিয়ে দেখে গ্লাসে এত্ত বড় তেলাপোকা। ঝাটা নিয়ে এসে দেখে তেলাপোকা গায়েব। এবার কুদ্দুসের রাগে মাথায় সব রক্ত উঠে গেলো, তার মনে হচ্ছে মাথা দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। গলা দিয়ে গড় গড় করে আওয়াজ হচ্ছে।
৬।
স্কুল কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে করোনা প্রতিরোধে। সুশীল বুদ্ধিজীবী আফু অনলাইন ক্লাস নিয়ে লেখালেখি শুরু করে দিলো। কুদ্দুস ভাবে মানুষ এমন হিপোক্রিট কিভাবে হয়। ঠিকই সামান্য বার্গার নিয়া মানুষের দুঃখ দুর্দশা ইত্যাদি টেনে এনে ব্যাথিত হলো কিন্তু আসন্ন মহামারী তে জরুরি অবস্থাতে রেসপন্ড না করে ক্লাস কন্টিনিউ করতে চায়। মানুষের দুঃখ দুর্দশা হলো এদের জন্য একটা ট্রাম্প কার্ড।
৭।
দুপুর। বিলকিসের ভাই ডিউটিতে থানায়। ভাবী ঘুমে। বয়ফ্রেন্ড মেসেঞ্জারে মেসেজ দিলো বাসার নিচে সে। বিলকিস দারোয়ানকে দিয়ে দুই কেজি আলু কিনতে পাঠালো৷ এরপর চুপিসারে বাসার ভিতরে ঢুকালো তার বয়ফ্রেন্ডকে।
এদিকে ইতালি থেকে ৩ টা ফ্লাইট ঢাকা আসছে আজ। বিলকিস থুক্কু সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার মজুদ করতে ব্যস্ত। সামনে দুবাই, সৌদি থেকে আরো ফ্লাইট আসবে। দারোয়ান থুক্কু কিছু গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা প্রেস ব্রিফিং এ বলছেন, দেশ প্রস্তুত করোনা মোকাবেলায়।

Popular Posts