Sapiens Synopsis E04: The Scientific Revolution - Part I



    The Discovery of Ignorance

একজন ১০০০ খ্রিষ্টাব্দের স্পেনীয় কৃষক যদি ঘুমিয়ে পড়ে এবং ৫০০ বছর পর কলম্বাসের জাহাজে জেগে উঠে, তার কাছে পৃথিবী খুব একটা অপরিচিত লাগবে না। কিন্তু কলম্বাস যদি একইভাবে ঘুমিয়ে পড়তেন এবং একবিংশ শতাব্দীতে আইফোনের রিংটোনে জেগে উঠতেন, কল্পনাতীত এক অপরিচিত বিশ্বে নিজেকে আবিষ্কার করতেন।

 একজন প্রাক আধুনিক শাসক পুরোহিত, দার্শনিক ও কবিদের অর্থ দিয়ে বিশ্বাস করতেন যে তারা আর শাসনকে বৈধতা দিবে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। তিনি আশা করতেন না যে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করবে, নতুন অস্ত্র উদ্ভাবন বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করবে। গত পাঁচ শতাব্দী সময় ধরে মানবজাতি ক্রমশ বিশ্বাস করতে থাকে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে তারা তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

ষোড়শ শতাব্দীর আগে কোন মানুষ জলপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন নি। ১৫২২ সালে ম্যাজেলানের অভিযান শেষে ৩ বছর পর ৭২ হাজার কিমি পাড়ি দিয়ে যখন স্পেনে ফিরে আসে, ম্যাগেলানসহ প্রায় সকল নাবিক প্রাণ হারায়। ১৮৭৩ সালে জুল ভার্ন কল্পনা করেছিলো কোন ধনী ব্রিটিশ ৮০ দিনে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে পারবে। আজ মধ্যবিত্ত যে কেউ ৪৮ ঘন্টায় পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে পারে, জীবিত। বিগত চার বছরে কোন জীবই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ছাড়িয়ে যেতে পারে নি, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পর মানুষ পৃথিবীর পৃষ্ঠ ত্যাগ করে। ১৬৭৪ সালে এন্টন ভ্যান লেভেনহুক অনুজীব পর্যবেক্ষণের আগে মানুষ ৯৯.৯৯% জীব অর্থাৎ অনুজীব সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তবে গত ৫০০ বছরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত হচ্ছে ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই, আমেরিকার বিজ্ঞানীরা নিউ মেক্সিকোর এলামোগোর্ডোতে প্রথম পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটায় পরীক্ষামূলকভাবে। এরপর এটি ইতিহাসের গতিপথই পাল্টে দিয়েছে, cold war এর উত্থান ঘটিয়েছে।

 আধুনিক বিজ্ঞান জ্ঞানের পূর্বের সকল ঐতিহ্য থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে ভিন্ন - অজ্ঞতা স্বীকার করার ইচ্ছা, পর্যবেক্ষণ ও গণিতের কেন্দ্রিকতা, নতুন ক্ষমতা অর্জন। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব কোন জ্ঞানের বিপ্লব ছিলো না, বরং এটি ছিলো অজ্ঞতার বিপ্লব। ইসলাম, খ্রীষ্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, কনফুসীয়বাদ সহ প্রাক আধুনিক ঐতিহ্যগুলো দাবি করেছিলো যে পৃথিবী সম্পর্কে যা জানার প্রয়োজন মানুষ তা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছে। মহান দেবদেবী বা ইশ্বর সকল জ্ঞানের অধিকারী, প্রাচীন গ্রন্থ ও মৌলিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে আমাদের কাছে তা তারা প্রকাশ করেছেন।

বৈজ্ঞানিক বিপ্লব না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ মানব সংস্কৃতি প্রগতিতে বিশ্বাস করতো না। তারা মনে করতো অতীতের যুগই ছিলো সোনালি যুগ, এবং বিশ্ব অপরিবর্তনশীল, যদি বিপথে না যায়। জ্ঞানের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো দুই ধরনের অজ্ঞতার কথা শুধু স্বীকার করতো - এক হলো ধরুন তের শতাব্দীতে ইয়র্কশায়ারের কোন কৃষক যদি জানতে চাইতো, কিভাবে মানবজাতির জন্ম হয়েছিলো, সে ধারণা করতো খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্যের কাছে এর সুনির্দিষ্ট উত্তর আছে, সে যেত স্থানীয় যাজকের কাছে৷ আরেকটা হলো যদি সেই কৃষক জানতে চায় মাকড়সা কিভাবে জাল বোনে, তাইলে সে যাজকের কাছে যেত না। কারণ খ্রীষ্টীয় শাস্ত্রে এর উত্তর নেই৷ এর মানে এই না যে খ্রীষ্টধর্ম দুর্বল, এর মানে হলো এটা অপ্রয়োজনীয়। মধ্যযুগীয় ইউরোপে যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ, রেটোনিক শিক্ষার ভিত্তি তৈরী করেছিল, গণিত সহজ পাটিগণিত ও জ্যামিতির বেশি যায় নি। পরিসংখ্যান কেউ অধ্যয়ন করে নি। আজ অল্প কিছু ছাত্র রেটোনিক অধ্যয়ন করে, যুক্তিবিদ্যা এখন দর্শন বিভাগে, ধর্মতত্ত্ব এখন সেমিনারিতে বিভক্ত। মনোবিজ্ঞান পড়তে গেলেও পরিসংখ্যান পড়তে হয়। কনফুসিয়াস, বুদ্ধ এবং যীশু বিস্মিত হতেন যদি আপনি তাদের বলতেন যে মানুষের মনকে বুঝতে ও তার অসুস্থতা নিরাময় করতে আপনাকে অবশ্যই প্রথমে পরিসংখ্যান অধ্যয়ন করতে হবে। ১৭৪৪ সালে যখন ওয়েবস্টার এবং ওয়ালেস নামে স্কটল্যান্ডের দুইজন পাদ্রী একটি জীবনবীমা তহবিল প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন, তারা তহবিলে কত টাকা থাকতে হবে তা বের করার জন্য গণিতবিদ ম্যাকলোরিনের সাহায্য নেন। তারা কিন্তু ওই ইয়র্কশায়ারের কৃষকের মত ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন নি, পবিত্র শাস্ত্রে উত্তর খোঁজেন নি বা বিমূর্ত দার্শনিক আলোচনায় লিপ্ত হন নি। তহবিলে ৫৮৩৪৮ পাউন্ড পুঁজি জমা হওয়ার কথা ছিলো এবং পুঁজি দাঁড়িয়েছিলো মাত্র ১ পাউন্ড কম, ৫৮৩৪৭ পাউন্ড। আজ ওয়েবস্টার এন্ড ওয়েলস ফান্ড বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পেনশন এবং বীমা কোম্পানিগুলোর মাঝে একটি।

নবী মুহাম্মদ (সঃ) যখন তার ধর্মীয় জীবন শুরু করেন, ঐশ্বরিক বাণী প্রচার করেন এবং সঙ্গী আরবদের যুক্তি দিয়ে বোঝান যে তিনি পূর্ণাঙ্গ সত্য জানেন। এরপর থেকে তার অনুসারী তাকে 'দ্য সীল অফ দ্য প্রফেটস' বলে সম্বোধন করেন। কিন্তু ডারউইন কখনো দাবী করেননি তিনি 'দ্য সীল অফ দ্য বায়োলজিস্ট', জীববিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন কিভাবে মস্তিস্ক চেতনা উৎপন্ন করে আজও তার কোন ভালো ব্যাখ্যা তাদের কাছে নেই। অজ্ঞতা স্বীকার করার ফলে আধুনিক বিজ্ঞান পূর্বের যে কোন সময়ের প্রচলিত জ্ঞানের চেয়ে আরো গতিশীল, নিখুত ও প্রাণবন্ত হয়েছে। আজ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের উপর মানুষের যে অন্ধবিশ্বাস তা প্রায় ধর্মের মতই শক্তিশালী। কলেজের প্রথম বছর থেকে উচ্চাভিলাষী পদার্থবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানীদের শেখানো হয় যে এটি তাদের আইনস্টাইন, হেনরিখ শ্লিম্যান এবং ম্যাক্স ওয়েবারদের জ্ঞানে ছাড়িয়ে যাবার মিশন।

সামরিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রভাব বিস্তৃত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন ট্রেঞ্চ ওয়ারের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো, বিজ্ঞানীরাই কলকাঠি নেড়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ম্যানহাটান প্রজেক্ট যুদ্ধের গতি পাল্টে দেয়। কিন্তু আরবরা উচ্চতর ধনুক বা তলোয়ারের জন্য স্যাসনিড সাম্রাজ্যকে পরাজিত করতে পারে নি, বাইজেন্টাইনদের উপর সেলজুকদের কোন প্রযুক্তিগত সুবিধা ছিলো না, মঙ্গোলীয়রা কোন অত্যাধুনিক অস্ত্রের জোরে চীনকে পরাজিত করতে পারে নি। তখন সৈন্য সংখ্যা এবং যুদ্ধ স্ট্র‍্যাটেজিই বড় ফ্যাক্টর ছিলো। রোমানরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে কার্থেজ, মেসিডোনিয়া এবং সেল্যুসড সাম্রাজ্যের ধারে কাছেও ছিলো না। কিন্তু এরা ছিলো দক্ষ সংগঠন, এদের ছিলো কঠিন শৃঙ্খলা এবং বিশাল জনশক্তি। খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর জেনারেল সিপিও ইমলিনিয়াস যদি ৫০০ বছর পর কন্সটান্টিনের আমলে উদয় হতেন, কন্সটান্টিনকে পরাজিত করার উত্তম সুযোগ পেতেন। কিন্তু ব্রিলিয়ান্ট কৌশলী নেপোলিয়ন যদি তার পেশাদার সৈন্যদেরকে আজকের আধুনিক ব্রিগেডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠাতেন, আধুনিক অস্ত্রের কাছে তাদের দক্ষতা অকার্যকর হবে। কারণ নেপোলিয়ন নিজে একজন গোলন্দাজ হলেও নতুন অস্ত্রের প্রতি সামান্যই আগ্রহ ছিলো।

অনেক সংস্কৃতি বিশ্বাস করতো, বিদ্যুৎ এক ক্রুদ্ধ দেবতার হাতুরি, যা পাপীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়৷ আঠারো শতাব্দীর মাঝামাঝি বেঞ্জামিন ফ্র‍্যাঙ্কলিন ঝড় ও বজ্রপাতের সময় একটি ঘুড়ি ওড়ান, এই অনুমান পরীক্ষা করে দেখার জন্য যে বজ্র কেবলই একটি বৈদ্যুতিক প্রবাহ, ফ্র‍্যাংলিনের গবেষণা দেবতাকে নিরস্ত্র করতে সক্ষম হয়েছিলো।

আরেকটি উদাহরণ হলো দারিদ্র‍্য। নিউ টেষ্টামেন্ট অনুযায়ী, যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার অল্পক্ষণ আগে একজন মহিলা খ্রিষ্টকে ৩০০ দিনারি মূল্যের তেল মালিশ করছিলো, যীশুর শিষ্যরা দরিদ্রদের দেওয়ার বদলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করার জন্য তাকে ভর্ৎসনা করেন। কিন্তু যীশু মহিলাকে সমর্থন করে বলেন যে, "দরিদ্রদের তুমি সব সময় পাবে, আর তোমরা তাদের যেকোন সময় সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু তোমরা সব সময় আমাকে পাবে না।"আজ পৃথিবীতে দুই ধরনের দারিদ্র‍্য বিরাজমান, সামাজিক দারিদ্র‍্য আর বায়োলজিক্যাল দারিদ্র‍্য। সামাজিক দারিদ্র‍্য বা অন্যকে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার দারিদ্র‍্য সবসময় থাকবে, কিন্তু আজ বায়োলজিক্যাল দারিদ্র‍্য বা খাদ্যের অভাব অন্য যে কোন যুগের তুলনায় সবচেয়ে কম। অনেক সমাজে খাদ্যের অভাবের চেয়ে স্থুলতায় মানুষ মারা যাচ্ছে বেশি।

 পুরো মানবজাতির আপাত অসমাধানযোগ্য সমস্যাগুলির মধ্যে একটি খুব অসন্তোষজনক, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে, মৃত্যুর সমস্যা। ইসলাম বা খ্রীষ্টধর্মে ধরে নেওয়া হয় মৃত্যু অনিবার্য এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান মনে করে এটি কেবল প্রায়োগিক বিজ্ঞানসংক্রান্ত সমস্যা। টেকনিক্যাল ব্যর্থতা যেমন হার্ট এটাক, ক্যান্সার ইত্যাদিতে মানুষ মারা যায় এবং প্রতিটা টেকনিক্যাল সমস্যার রয়েছে টেকনিক্যাল সমাধান। কিন্তু এটি সত্য যে বর্তমানে আমরা সকল প্রকার টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধানে সক্ষম নই। সুমেরের রাজা গিলগামেশ মৃত্যুকে জয় করার জন্য বিশ্বের শেষ প্রান্তে যাত্রা শুরু করলেন তবুও তার অনুসন্ধান ব্যর্থ হয়। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন খালি হাতে, বরাবরের মতই মরণশীল, কিন্তু এক গভীর জ্ঞান সঙ্গে নিয়ে।

আগে ক্ষুদ্র জখম থেকে গ্যাংগ্রিন হতে পারতো, হাত পা কেটে ফেলতে হতো, ১১৯৯ সালে রাজা রিচার্ড দ্য লায়নহার্টের কাঁধে জখম হওয়ায় কেটে ফেলা ছিলো অসম্ভব, তিনি মারা যান ২ সপ্তাহ পর। উনবিংশ শতাব্দীতেও দাঁত তোলার মত অঙ্গচ্ছেদ কোন প্রকার এনেস্থেশিয়া ছাড়াই করা হতো। কেবল উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রথম এনেস্থেটিকস, ক্লোরোফর্ম এবং মরফিন নিয়মিত ব্যবহার করা শুরু হয়। ক্লোরোফর্ম আবির্ভাবের আগে চারজন সৈন্য একজন আহত কমরেডকে ধরে রাখতো, ডাক্তাররা তার আহত অঙ্গ কেটে ফেলতো। আধুনিক অপারেশনের আগে সামান্য আঘাত ছিলো মৃত্যুদন্ডের অগ্রহণযোগ্য রায়। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম এডওয়ার্ডকে (১২৩৭-১৩০৭) একজন পুরুষ উত্তরাধিকারী (দ্বিতীয় এডওয়ার্ড) দিতে রাণী এলেনকে ষোলবার চেষ্টা করতে হয়েছিলো যা ছিলো একজন রাণীর মৌলিক মিশন সেই সময়। তাদের ১০ সন্তানই দশ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা যায় যদিও তাদের কোন বংশগত রোগ ছিলো না এবং বাকি পাঁচ সন্তান সবাই কন্যা ছিলো। রাণী হিসেবে এলেন খুবই ধৈর্যশীলা ছিলেন, যদিও দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের স্ত্রী তার মায়ের মত ছিলো না। ইসাবেলা যখন দ্বিতীয় এডওয়ার্ডকে হত্যা করেন, তার বয়স ছিলো ৪৩ বছর।

গিলগামেশের অমরত্বের প্রজেক্ট কি সফল হবে? অনেকে মনে করেন আমরা অমরত্ব লাভ করবো (দুর্ঘটনা ব্যতীত) কারণ উনিশ শতকের তুলনায় একবিংশ শতাব্দীর চিকিৎসা জ্ঞানের উন্নতি আশা ব্যক্ত করে। শুধুমাত্র আধুনিক মতাদর্শ এখনো মৃত্যুকে জাতীয়তাবাদে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনকারী বিবেচনা করে। জাতীয়তাবাদ প্রতিশ্রুতি দেয় যে, এর চরম সংকটকালে জাতির জন্য যিনি জীবন দিবেন, তিনি অনন্তকাল মানুষের স্মৃতিতে বেচে থাকবেন। তবুও এই প্রতিশ্রুতি এতই ঝাপসা যে এমনকি অধিকাংশ জাতীয়তাবাদী আসলে জানে না এর অর্থ কি৷

বৈজ্ঞানিক গবেষণা হচ্ছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিষয়৷ ডারউইন যদি জন্ম না নিতো, তাহলে হয়তো বিবর্তন তত্ত্ব আলফ্রেড রাসেল উদ্ভাবন করে ফেলতো কিন্তু ইউরোপীয় শক্তিগুলো যদি বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য বিনিয়োগ না করতো, তবে ডারউইন বা রাসেল কেউই বিবর্তনবাদ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করতে পারতো না। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা ও ব্যাংকাররা সারা পৃথিবী জুড়ে ভৌগলিক অভিযানের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতো, যেখানে ১৯৪০ এর দশকে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই নিউক্লিয়ার ফিজিক্স গবেষণায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে। বাজেটের প্রায়োরিটি মানবজাতির পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে কিন্তু সমস্যা হলো সম্পদ সীমিত। অধ্যাপক স্লাগহর্ন যদি গবেষণা করতে চান গরুর সংক্রামক রোগ নিয়ে এবং অধ্যাপক স্প্রাউট যদি গবেষণা করতে চান বাছুর মা থেকে সরিয়ে নেওয়ায় মানসিক আঘাত পায় কিনা, অবশ্যই স্লাগহর্নের ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বাণিজ্যিক লাভ স্লাগহর্নের গবেষনায় বেশি। ভারতের রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে হয়তো স্প্রাউট ভালো সুবিধা পেতে পারেন যেখানে গরু পবিত্র, তাতে তিনি হয়তো বড়জোর লিখতে পারেন, বিষণ্ণতার ফলে দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়৷ বিজ্ঞান তার নিজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে সক্ষম নয়। তার আবিষ্কার দিয়ে কি করা হবে এটি তাও নির্ণয় করতে অক্ষম। এটি স্পষ্ট যে একটি উদারনৈতিক সরকার, একটি কমিউনিষ্ট সরকার, একটি নাৎসি সরকার এবং একটি পুঁজিবাদী কর্পোরেশন সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে একই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ব্যবহার করবে। গত ৫০০ বছর ধরে বিজ্ঞান, সাম্রাজ্য ও পুঁজিবাদের মধ্যকার ফিডব্যাক লুপ যুক্তিসঙ্গতভাবে ইতিহাসের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

The Marriage of Science and Empire

যে সকল জাহাজ সমুদ্র পাড়ি দিতো, সেগুলোর নাবিকরা জানতো তাদের অর্ধেকই মারা যাবে। এই বিপর্যয়ের কারণ কোন স্থানীয় আদিবাসী, শত্রু জাহাজ বা হোমসিকনেস ছিলো না, কারণ ছিলো স্কার্ভি নামে এক রহস্যময় রোগ৷ ১৭৪৭ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক জেমস লিন্ড পর্যবেক্ষণ করেন যে লেবুজাতীয় ফল খেলে এটি দ্রুত সেরে উঠে কিন্তু তিনি জানতেন না এর কারণ ভিটামিন-সি। দূরপাল্লার যাত্রায় নাবিকরা সাধারণত গরুর মাংস এবং বিস্কুট এর উপর নির্ভর করতো। ক্যাপ্টেন জেমস কুক এরপর প্রচুর পরিমাণে আচারজাতীয় খাবার নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করলেন এবং সেবার স্কার্ভি রোগে কুক একজন নাবিকও হারান নি।

কুকের অভিযান উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার দৌড়ে বৃটিশদের এগিয়ে রেখেছিলো । কুকের অভিযান অষ্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বৃটিশ উপনিবেশ স্থাপনে ভূমিকা রেখেছিলো। ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও স্থানীয় বাসিন্দারা নির্মূল হয়ে যায়। তাসমানীয়দের ভাগ্য ছিলো সবচেয়ে খারাপ, কুকের আগমনের এক শতাব্দীর মাঝে ১০ হাজার বছরের বিস্ময়কর বিচ্ছিন্নতায় বেঁচে থাকা নারী ও শিশুসহ শেষ মানুষটি পর্যন্ত একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। বৃটিশরা তাসমানীয়দের লেখাপড়া, খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ এবং কাপড় সেলাই, চাষাবাদে বাধ্য করেছিলো। কিন্তু এর সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে অবশেষে বিজ্ঞান ও প্রগতির আধুনিক জগত থেকে পালিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলো।

কুকের অভিযানের অনেক আগেই বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ ছিলো অনুন্নত অঞ্চল। রোমান সাম্রাজ্য সম্পদ আহরণ করতো উত্তর আফ্রিকা, বলকান আর মধ্য প্রাচ্যের প্রদেশগুলো থেকে। রোমের পশ্চিম ইউরোপীয় প্রদেশগুলি ছিলো সম্পদহীন বন্য অঞ্চল, উত্তর ইউরোপ এতই জনমানবশূন্য এবং বর্বর ছিলো যে জয় লাভেরও যোগ্য ছিলো না। ১৫০০ থেকে ১৭৫০ এর মাঝে পশ্চিম ইউরোপ আরো গতিশীল এবং বহির্বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠে। তারপরেও ইউরোপ এশিয়ার মহাশক্তিগুলোর তুলনায় নগণ্য ছিলো। ১৭৭৫ সালে বিশ্বের শতকরা ৮০ ভাগ অর্থনীতির জন্য এশিয়াকে গণ্য করা হতো, ইউরোপকে মনে করা হতো অর্থনৈতিক বামন। অটোমান সাম্রাজ্য, পার্সিয়ার সাফাভিস সাম্রাজ্য, ভারতের মোগল সাম্রাজ্য আর চীনাদের মিং ও চিং রাজবংশদের জন্য আধুনিক যুগের শুরু ছিলো সুবর্ণ যুগ। তাহলে ইউরোপীয়রা কিভাবে বিশ্বের দূরবর্তী কোণ থেকে পৃথিবী জয় করলো? মোটাদাগে এর কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে বিজ্ঞানীদের। কিন্তু সেটাও ১৮৫০ সালের আগের বিষয় ছিলো না। তাহলে অষ্ট্রেলিয়া কেন ১৭৭০ এ বৃটিশ ক্যাপ্টেন জেমস কুকের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিলো, কেন হুসেইন পাশা দ্বারা নয়? ১৮৩০ এ বৃটেনে ব্যাবসার জন্য পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিক রেলপথ চালু করা হয়েছিলো। ১৮৮০ এর মাঝে ইউরোপীয়রা ৩৫০,০০০ কিমি রেলপথ গড়ে ফেলে অথচ পুরো বাকি বিশ্ব ৩৫০০০ কিমি রেলপথ বানায় মাত্র। কেন ইউরোপীয়রা এগিয়ে গেল, এশীয়রা কেন অর্থনীতির গদি হারালো?

চীন ও পার্সীয়দের মাঝে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের মত প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের কোন ঘাটতি ছিলো না। তারা এগুলি ইচ্ছামত তৈরী করতে পারত বা কিনে আনা যেতে পারতো। তাদের অভাব ছিলো মূল্যবোধ, বিচার কাঠামো, সামাজিক রাজনৈতিক ব্যাবস্থার, যে জিনিসগুলো ত্বরিতগতিতে অনুকরণ ও আত্তীকরণ করা সম্ভব নয় আর পাশ্চাত্যে এগুলো তৈরী ও পরিপূর্ণ হতে শত বছর লেগে গিয়েছিলো। ফ্রান্স ও আমেরিকা দ্রুত বৃটেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, কিন্তু চীনা ও পারসীয়রা পারে নি কারণ তারা ভিন্নভাবে চিন্তা করতো এবং সমাজকে ভিন্নভাবে গড়ে তুলেছিলো। এর মানে এই নয় যে বিজ্ঞানের জন্য ইউরোপীয়দের একটি অনন্য জিন রয়েছে, ইসলাম যেভাবে আরব মনোপলি হিসেবে শুরু হলেও পরে তা তুর্কি ও পার্সীয়রা অধিকার করেছিলো, আধুনিক বিজ্ঞান ইউরোপীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে শুরু হলেও তা একটি বহুজাতিক এন্টারপ্রাইজে পরিণত হচ্ছে। ইউরোপ, চীন এবং মুসলিম বিশ্বে আপাত সাম্যতা ছিলো একটি ভ্রম। বিজ্ঞান ও পুঁজিবাদের জোরে চলতে থাকে ইউরোপের উন্নয়নের চাকা।

আগের সাম্রাজ্য অন্বেষণকারীরা ধারণা করেছিলো যে তারা ইতিমধ্যে পৃথিবীকে বুঝতে পেরেছে। প্রাচীনকালে মানচিত্র আকার সময় তারা অপরিচিত এলাকা এড়িয়ে যেত বা কাল্পনিক বা অলৌকিক কিছু দিয়ে ভরিয়ে রাখতো। এমনকি মধ্যযুগীয় কলম্বাসও পুরাতন 'সম্পূর্ণ' বিশ্ব মানচিত্রে বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি যখন ১৪৯২ সালে আমেরিকাকে আবিষ্কার করেন তাকে ইন্ডিয়া ভেবেছিলেন এবং বাকি জীবন এই ত্রুটি নিয়েই বেঁচে ছিলেন। ১৫ ও ১৬শ শতকে ইউরোপীয়রা প্রচুর ফাকা স্থানসহ বিশ্ব মানচিত্র আকা শুরু করেছিলো, যা তাদের অভিযানের মাধ্যমে পূর্ণ করার অভিপ্রায় ছিলো। প্রথম আধুনিক মানুষ সে হিসেবে ইতালীয় নাবিক আমেরিগো ভেসপুচি, যিনি আগে কলম্বাসের আসা মহাদেশটিকে নতুন মহাদেশ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তার নাম অনুসারে মহাদেশটির নাম হয় আমেরিকা। কারণ তিনি বলতে পেরেছিলেন 'আমি জানি না', কলম্বাসের মত ভাবেন নি 'সমগ্র বিশ্বের মানচিত্র আকা হয়ে গেছে, তাই এটা ইন্ডিয়াই হবে, নতুন কোন মহাদেশ হতে পারে না।'

চীনের মিং রাজত্বের এডমিরাল ঝেং হে ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ সালের মাঝে সাতটি বিশাল রণতরী নিয়ে চীন থেকে ভারত মহাসাগরে পৌঁছান। এগুলির মাঝে সর্ববৃহৎ এই অভিযানে প্রায় ৩০০ জাহাজ এবং ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে বাহিনি গঠিত হয়েছিলো৷ ১৪৯২ সালে কলম্বাসের ৩ টি ছোট জাহাজ আর ১২০ জন নাবিকের বহর তার তুলনায় ছিলো ৩ টা মশার মত। কিন্তু ইউরোপীয়দের সাথে ঝেং হের পার্থক্য হলো তিনি যেসব দেশ পরিদর্শন করেন সেগুলো আগেই অধিকার করা এবং উপনিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করেন নি। আর ১৪৩০ এ বেইজিং এর শাসক ব্যবস্থা পাল্টালে এই নৌবহর ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং চীনা শাসকদের আগ্রহ সাম্রাজ্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ঝেং হের অভিযান প্রমাণ করে ইউরোপীয়দের হাতে অসামান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা ছিলো না, তারা শুধু উচ্চাকাঙ্খী ছিলো এবং অন্বেষণের ইচ্ছা পোষণ করতো।

রোমান, মঙ্গল ও Aztec রা সর্বগ্রাসী হয়ে নতুন ভূমি অধিকার করেছিলো ক্ষমতা ও সম্পদের জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়। পক্ষান্তরে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা দূরবর্তী উপকূলগুলির উদ্দেশ্যে অভিযানে গিয়েছিলো নতুন ভূমির পাশাপাশি নতুন জ্ঞান অর্জনের আশায়। ১৭৯৮ সালে যখন নেপোলিয়ন মিশর আক্রমণ করেন, তিনি ১৬৫ জন গবেষককে সঙ্গে নিয়েছিলেন। আগেকার যুগে সাম্রাজ্যের সম্রাটরা প্রতিবেশী সাম্রাজ্যের সাথেই দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকতেন, দূরবর্তী অঞ্চল আবিষ্কারে মন দিতে পারতেন না। মহান আলেকজান্ডারের অভিযানের ফলে কোন নতুন সাম্রাজ্য আবিষ্কৃত হয় নি, বরং একটি বিদ্যমান সাম্রাজ্যকে অন্যায়ভাবে অধিকার করেছিলেন - যেটি ছিলো পারসীয়দের।

যারা মনে করতো তাদের মানচিত্র সম্পূর্ণ আর যারা তাদের মানচিত্র ফাকা রাখতো তাদের মাঝে যে বিজয়ের সম্ভাবনার কতটা পার্থক্য তার স্পষ্ট নজির হলো স্প্যানিশদের Aztec এবং ইনকা সাম্রাজ্য বিজয়। কলম্বাসের ১৪৯২ তে আমেরিকায় অবতরণ থেকে কর্তেজের মেক্সিকোতে অবতরণের মধ্যবর্তী বছরগুলোতে স্পেনীয়রা অধিকাংশ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ জয়লাভ করে, বিশ বছরের মাঝে প্রায় সম্পূর্ণ ক্যারিবীয় জনসংখ্যা নির্মূল হয়ে যায়। এই গণহত্যা এজটেক সাম্রাজ্যের একদম দোরগোড়াতে সংঘটিত হলেও এজটেকরা জানতে পারেনি, কারণ তারা ধরেই নিয়েছিলো তারা সমগ্র পৃথিবী সম্পর্কে জানে এবং এর বাইরে কারো অস্তিত্ব নেই। স্প্যানিয়ার্ডদের আগমন ছিলো তাদের কাছে মহাকাশ থেকে আক্রমণের সমতুল্য। কোন এজটেকরা মনে করলো স্প্যানিয়ার্ডরা দেবতা, কেউ মনে অপদেবতা। তাই তারা স্পেনীয়দের তাড়িয়ে দেওয়ার বদলে ঢিমেতালে আলাপ আলোচনা করতে থাকে৷ কারণ মাত্র ৫৫০ জন স্পেনিয়ার্ডকে তারা লক্ষ লক্ষ মানুষের সাম্রাজ্যের থ্রেট মনে করে নি। ১৫১৯ সালে কর্তেজ নোঙ্গর করে নিকটবর্তী স্থানীয়দের কাছে ঘোষণা করলেন 'আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এসেছি। আমাকে তোমাদের সম্রাটের কাছে নিয়ে যাও।' বাস্তবে স্পেনের রাজা কর্তেজকে চিনতেন না এবং এজটেক সাম্রাজ্যের কথাও জানতেন না৷

কর্তেজ যখন সম্রাট মন্তেজ্যুমারের কাছে পৌছান তিনি সম্রাটের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনার মাঝে স্পেনিয়ার্ডরা দেহরক্ষীদের হত্যা করে। কর্তেজ তখন খুবই জটিল একটি পরিস্থিতিতে অবস্থান করছিলেন। সম্রাটকে বন্দী করলেও কক্ষের বাইরে হাজার হাজার সম্রাটের অধীনস্থ যোদ্ধা, লক্ষ লক্ষ বিরোধী নাগরিক এবং একটি সমগ্র মহাদেশ যারা সম্রাটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত নয়। এজটেক ছিলো অতিমাত্রায় কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত শাসন ব্যবস্থা, আর এর সুযোগ নিয়ে কর্তেজ সম্রাটকে স্বাভাবিক আচরণ করতে বাধ্য করলেন যেন কেউ না বুঝে সম্রাট আসলে কর্তেজের নিয়ন্ত্রণে। কয়েক মাস পর এজটেক অভিজাতরা কর্তেজ এবং সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। কিন্তু স্প্যানিয়ার্ডরা প্রাসাদ রাজনীতিতে ফাটল ঘটায় এবং জনগণকে সম্রাট ও অভিজাতদের প্রতি বিদ্রোহ করতে অনুপ্রাণিত করে। প্রজারা এজটেক শাসকদের ঘৃণা করতো এবং তাদের চাপানো জোয়াল থেকে মুক্তি পেতে স্প্যানিয়ার্ডদের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু তারা ক্যারিবীয় গণহত্যার কথা জানতো না, জানতো না স্প্যানিয়ার্ডরা এজটেক শাসকদের থেকেও খারাপ। স্থানীয় জনগণ যখন বুঝতে পারে, তখন খুব দেরী হয়ে গিয়েছিলো। আমেরিকার দেশীয় জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছিলো, মূলত অপরিচিত রোগে যা আমেরিকায় স্পেন থেকে প্রবেশ করেছিলো, আর যারা বেচে ছিলো তারা নিজেদের খুজে পেলো লোভী ও বর্ণবাদী স্প্যানিয়ার্ডদের আঙ্গুলের নিচে। এভাবে মাত্র ৫৫০ জন স্প্যানিয়ার্ড নিয়ে শুরু করা কর্তেজ লক্ষ মানুষের এজটেক সাম্রাজ্য জয় করে নিলো। স্প্যানিয়ার্ডরা এজটেক জয় করেও দম ফেলেনি, দশ বছর পর পিজারো দক্ষিণ আমেরিকায় ইনকা সাম্রাজ্যের উপকূলে আসেন যেটি জয় করতে এজটেক, টোলটেক ও মায়ারাও মাথা ঘামায় নি । তিনি কর্তেজের চেয়েও কম সৈন্য নিয়ে এসেছিলেন, ১৬৪ জন। ইনকারা এজটেকের পরিণতি সম্পর্কে কিছুই জানতো না। কাজেই আক্রমণকারীদের হাতে নিশ্চিন্তে তাদের ভাগ্যকে সঁপে দেয়।

কিন্তু এশীয়রা যেন পিছিয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলো৷ অটোমান, সাফাভিদ, মুঘল ও চীন খুব তাড়াতাড়িই শুনেছিলো যে ইউরোপীয়রা বড় কিছু আবিষ্কার করেছে। তবুও তারা এই সকল আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহ দেখায় নি। ভারত বা চীন আমেরিকা অনুসন্ধানের জন্য কোন অভিযান পাঠায় নি। ঝেং হে চীন থেকে পূর্ব আফ্রিকায় যে পরিমাণ সম্পদ নিয়ে গিয়েছিলেন তা আমেরিকায় অভিযান চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো কিন্তু চীনারা আগ্রহীই ছিলো না। চীনাদের মানচিত্রে ১৬০২ সাল পর্যন্ত আমেরিকার অস্তিত্বই ছিলো না।

কেবল বিংশ শতাব্দীতে নন-ইউরোপীয়ান সংস্কৃতিগুলি একটি সত্যিকার বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছিলো। এটি ছিলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ইউরোপীয় আধিপত্যকে পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলো। আলজেরীয়দের স্বাধীনতা সংগ্রামে (১৯৫৪-৬২) ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিজয় এবং ভিয়েতনামের আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বিজয় প্রমাণ করে একটি স্থানীয় সংগ্রাম যখন বৈশ্বিক বিষয় হয়ে উঠে, তখন তা পরাশক্তিকেও পরাজিত করতে পারে৷ চিন্তা করুন এজটেক সম্রাট যদি স্পেনের জনগণের মতামতকে ব্যবহার করতে পারতেন স্পেনের শত্রু পর্তুগাল, ফ্রান্স বা অটোমান সাম্রাজ্যের সহায়তা লাভ করতে সক্ষম হতেন তাহলে কি হতো।

যখন মুসলিমরা ভারত জয় করে, তারা তারা ভারতকে অধ্যয়ন করতে চায় নি, শুধু শাসন করতে চেয়েছিলো, কোন ভূতাত্ত্বিক বা প্রাণীবিজ্ঞানীকে সাথে নিয়ে আসে নি। কিন্তু ব্রিটিশরা যখন ভারতে উপনিবেশ গড়তে আসে, তারা ভারতকে জানার জন্য প্রস্তুত হয়েই এসেছিলো। তারা ১৮০২ সালে মহাজরিপ শুরু করে এবং ষাট বছর এটি চলে। সমগ্র ভারতের ম্যাপ তৈরী করে, এমনকি এভারেস্টের উচ্চতাও সঠিকভাবে নির্ধারণ করে। সামরিক সম্পদ ও সোনার খনির খোঁজ করে। যেই মহেঞ্জোদারোকে ভারতীয়রাই ভুলে গিয়েছিলো ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ধ্বংসের পর, সেটিকে খুড়ে বের করে বৃটিশরা। হেনরি রাউলিনসন প্রাচীন ফার্সি, ব্যাবিলীয় লিপির পাঠোদ্ধার করেন। উইলিয়াম জোন্স ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগুলো ক্যাটেগোরাইজ করেন। এমনকি বৃটিশরা রঙিন প্রজাপতি, মাকড়সারও ক্যাটালগ তৈরী করে। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যগুলো বিশ্বাস করতো যে কার্যতভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই তাদের প্রজাদের সংস্কৃতি জানতে হবে। ভারতে বৃটিশ কর্মকর্তাদের আসার পর তিন বছর ক্যালকাটা কলেজে পড়তে হতো। উচ্চতর জ্ঞান ছাড়া কোটি কোটি ভারতীয়দেকে দুই শতাব্দী ধরে শাসন, নিপীড়ন ও শোষণ করা অল্প সংখ্যক ব্রাইটনদের পক্ষে অসম্ভব ছিলো। বাংলা অধিকার করার পর বৃটিশরা নিজেদের সমৃদ্ধি ছাড়া অন্য কিছুতে আগ্রহী ছিলো না তাই তারা একটি বিপদজনক অর্থনীতি গ্রহণ করে ফলে কয়েক বছরের মাঝে বৃহত্তর বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। আপনি তাদের অপরাধের তালিকা লিখে এনসাইক্লোপিডিয়া সহজেই পূর্ণ করতে পারবেন। একইভাবে তাদের সাফল্যের পরিমাণ দিয়েও আরেকটি এনসাইক্লোপিডিয়া পূর্ণ করতে পারবেন।

বৃটিশরা খেয়াল করে প্রথম সংস্কৃতিভাষী ব্যক্তিরা নিজেদের আর্য বলতো, তারা ৩ হাজার বছরেরও আগে ভারত আক্রমণ করেছিলো। প্রাচীন ফার্সিভাষীরা নিজেদের আরিয়া বলতো। ইউরোপীয় গবেষকরা মনে করতেন আর্যরা ফার্সি এবং সংস্কৃত ভাষার জন্ম দিয়েছিলো, আবার গ্রীক, ল্যাটিন, গথিক এবং কেলটিক ভাষারও জন্ম দিয়েছিলো। পরে স্কলাররা মেনে নেন যে আর্যরা শুধু একটি ভাষাগোষ্ঠি নয়, তারা একটি আলাদা জাতি।

আর্যরা ছিলো লম্বা, তাদের ছিলো হালকা চুল, নীল চোখ, কঠোর পরিশ্রমী এবং অত্যন্ত বিচক্ষণ মানুষ। দুঃখজনকভাবে ভারত ও পারস্য আক্রমণকারী আর্যরা স্থানীয় অনার্যদের বিয়ে করে এবং তাদের ফর্সা গায়ের রং, স্বর্ণকেশ, বিচক্ষণতা, কঠোর পরিশ্রমের ক্ষমতাও হারাতে থাকে। এই বর্ণবাদতত্ত্ব বহু দশক ধরে জনপ্রিয় ছিলো এবং রাজনীতির ব্রহ্মাস্ত্র ছিলো কিন্তু এক পর্যায়ে তা বিজ্ঞানীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ে। আজ ফ্রেঞ্চ ফ্রন্ট ন্যাশনাল, ডাচ পার্টি ফর ফ্রিডমের মত ডাচ পার্টির মত ডানপন্থী দলগুলো মুসলিমদের ইউরোপে প্রবেশকে বিরোধিতা করে বর্ণবাদ দিয়ে নয়, বরং দুই সংস্কৃতির দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে।

সাম্রাজ্যবাদী সমর্থন ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান বেশি দূর অগ্রসর হতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে। যদি ব্যাবসায়ীরা অর্থ উপার্জন করতে না চাইতো, কলম্বাস কখনো আমেরিকা পৌঁছাতে পারতেন না, জেমস কুক অষ্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাতে পারতেন না আর নীল আর্মস্ট্রংও চাঁদের বুকে ছোট্ট পদক্ষেপটি দিতে পারতেন না।

The Capitalist Creed

আধুনিক অর্থনীতি বুঝতে আপনাকে আসলেই শুধু একটি শব্দই শিখতে হবে। সেটি হলো প্রবৃদ্ধি। ধরুন স্যামুয়েল গ্রিডি একটি ব্যাংক স্থাপন করলেন। মি. স্টোন তাতে এক মিলিয়ন ডলার রাখলেন। অর্থসম্বলহীন ম্যাকডোনাট একটি বেকারী বানানোর জন্য গ্রিডির ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার লোন নিলেন এবং বেকারী বানানোর জন্য স্টোনকে ১ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পরিশোধ করলেন। মি. স্টোন সেটা আবার ব্যাংকে জমা করলেন। তাহলে ব্যাংকে আসলে কত ডলার থাকলো? হ্যা, ১ মিলিয়ন। কিন্তু মিঃ স্টোনের ব্যাংক একাউন্টে কত ডলার জমা হয়েছে? ২ মিলিয়ন।

বর্তমান ব্যাংকগুলিও একই কাজ করে আরো চরম মাত্রায়। ব্যাংকগুলিকে যত ডলার থাকে তার ১০ গুণ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদি কোন ব্যাংকের সকল একাউন্ট হোল্ডার একত্রে তাদের অর্থ উত্তোলন করতে চায়, তখন ব্যাংকের পতন ঘটবে যদি না সরকার এটিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। বিশাল প্রকল্পের মত শোনালেও যদি এটি প্রতারণা হয়, তবে সমগ্র আধুনিক অর্থনীতিই প্রতারণা। কিন্তু এই প্রতারণা কিভাবে আমাদের উন্নতিতে এত সহায়তা করেছে?

প্রাচীনকালে যখন এই ধরনের কোন ব্যাংক ছিলো না, ম্যাকডোনাট কোন ঋণ পেতেন না। ঋণ ছাড়া তিনি বেকারি বানাতে পারতেন না। বেকারি ছাড়া কেক বানাতে পারতেন না। কেক ছাড়া তিনি অর্থ রোজগার করতে পারতেন না। অর্থ ছাড়া তিনি মি. স্টোনকে নিয়োগ দিতে পারতেন না৷ অর্থাৎ অর্থনীতিতে ম্যাকডোনাট এবং মি. স্টোন যোগ হতে পারতেন না, অর্থনীতি হিমায়িত রয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ব্যাংকের এই 'প্রতারণা' উপরের ফাঁদ থেকে বের করে অর্থনীতিতে ম্যাকডোনাট এবং স্টোনকে যুক্ত করেছে। তাই বর্তমান অর্থনীতিকে বলা হয় Growth Economy.

পূর্বে অর্থনীতি বৃদ্ধি পেত না, কাজেই কেউ যদি লাভবান হতো বা কারো বেকারির ব্যাবসা বিশাল আকার ধারণ করতো , তাহলে অবশ্যই সেটা অন্য কোন ব্যাবসাকে ক্ষতি করে, কারণ অর্থনীতির আকার সীমিত। এই জন্য অনেক সংস্কৃতি মনে করতো, অর্থ উপার্জন পাপ। যীশু বলেছিলেন, 'ধনীর পক্ষে ইশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের থেকে উটের পক্ষে সুঁইএর ফুটোর মধ্য দিয়ে যাওয়া সহজ' (ম্যাথিউ ১৯ঃ২৪)। ধনীরা তাদের মন্দ কাজের প্রায়শ্চিত্ত করতে বাধ্য হয়ে তাদের উদ্বৃত্ত থেকে দাতব্যে দান করে।

 যদি বিশ্বের মোট খাদ্যের পরিমাণ সমান থাকতো তাহলে ঋণ দেওয়ার কোন উপায় থাকতো না। আজকের খাদ্যের পরিমাণ ও আগামীকালের পরিমাণের পার্থক্যই হলো ঋণ। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন যে রুটি প্রস্তুতকারক অথবা রাজা যারা আপনার কাছে ঋণ চাইছে তারা অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে কৌশলে মুনাফা লাভ করতে পারবে, তাহলে সেটা একটা অগ্রহণযোগ্য ঝুকি হয়ে যাবে। তাই প্রাক আধুনিক বিশ্বে ঋণ পাওয়া কঠিন ছিলো এবং বিখ্যাত রাজারা প্রাসাদ নির্মাণ অথবা যুদ্ধ করতে চাইত কেননা তাদের উচ্চ কর ও ট্যারিফের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ ছিলো না।

ব্যাংক যখন 'প্রতারণা' শুরু করলো, আপনি ধনী হতে পারেন আমাকে দরিদ্র না করেও। যেমন, রুটির সাইজ সেম থাকলে আমি বড় টুকরা খেলে আমার ভাই ছোট টুকরা খেতে বাধ্য। কিন্তু অর্থনীতি রুটির মত এক নেই, এর আকার বড় হচ্ছে, যেটাকে আমরা বলি প্রবৃদ্ধি। আর ঋণই নিয়ে আসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কারণ ম্যাকডোনাট বেকারি বানানোর জন্য ঋণ না নিলে ব্যাংকের আর 'প্রতারণা' করা লাগতো না, অর্থনীতির পাইও আর বড় হতো না।

আজকের যুগে ব্যক্তিগত উদ্যোক্তার মুনাফা বৃদ্ধি হচ্ছে সমষ্টিগত সম্পদ ও সমৃদ্ধির বৃদ্ধি। স্কটিশ অর্থনীতিবিস স্মিথ বলেছেন, লিপ্সা থাকা ভালো আর ধনী হওয়ার মাধ্যমে কেবল আমার নয়, সকলেরই উপকার হয়, যেটা যীশুর বক্তব্যের বিপরীত। স্মিথ সম্পদ ও নৈতিকতার চিরাচরিত দ্বন্দ্বকে অস্বীকার করলেন এবং ধনীদের জন্য স্বর্গের দরজা খুলে দিলেন। ইগোইজম ইজ অলট্রুইজম। আমি যদি গরীব হই, আপনিও গরীব হয়ে পড়বেন, কারণ আমি আপনার পরিষেবা নিতে পারছি না। স্মিথের মতে প্রতিবেশীদের লুন্ঠন করে মানুষ ধনী হয় না, বরং পাই এর আকার বৃদ্ধি করে হয়।

তবে এখানে দেখার বিষয় মুনাফা কোন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থনৈতিক গ্রোথ তখনই হবে যখন কৃষক আরো কর্মচারী ক্ষেতে নিয়োগ দিবে, তখন নয় যখন কৃষক অর্থ সিন্দুকে জমা রাখবে এবং শুধু গণনা করার জন্য বের করবে। উৎপাদনের লভ্যাংশকে অবশ্যই পুনরায় বিনিয়োগ করতে হবে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। এইজন্যই পুঁজিবাদকে পুঁজিবাদ বলা হয়, কারণ এর চালিকাশক্তি পুঁজি। একজন ফারাও যিনি একটি অনুৎপাদনশীল পিরামিডে সম্পদ ব্যয় করেন তিনি পুঁজিবাদী নন। যেসব রাজা টুর্নামেন্টে, ভোজসভায়, প্রাসাদে, যুদ্ধে, স্মৃতিস্তম্ভে অর্থ ব্যয় করতেন তারা পুঁজিবাদী নন। আজকের বিলিওনিয়াররা মধ্যযুগীয় অভিজাতদের তুলনায় অনেক বেশী ধনী কিন্তু বেহিসাবী খরচে আগ্রহী নয়। তারা মুনাফার অংশ আবার ব্যাবসাতেই বিনিয়োগ করে। জেফ বেজোসের স্যুটটি স্যাভিলে রো এর হতে পারে বা জেট বিমানে ভ্রমণ করতে পারেন, কিন্তু তিনি পণ্য উৎপাদনের জন্য যে ব্যয় করেছেন, তার তুলনায় এটি কিছুই নয়। শুধু একটি নেকড়ে সমাজই চরম বোকার মত বিশ্বাস করে যে অনির্দিষ্টকাল ধরে ভেড়ার সরবরাহ বাড়তে থাকবে। তবে অর্থনীতির গ্রোথে পুঁজিবাদের সাথে যেটা কাজ করে, সেটি হলো বিজ্ঞান। আজ সরকার ও ব্যাংকগুলি এই আশায় মুদ্রাস্ফীতি হতে দিচ্ছে যে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলীরা বড় কিছু নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন, বাবল বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই। যদি তারা সময়মতো প্রত্যাশা পূরণ না করে, তাহলে আমরা কঠিন সময়ের দিকে এগিয়ে যাবো।

 প্রাচীন রাজা ও সেনাপতিরা ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীদের চিন্তাকে অবজ্ঞা করতো। তাদের উপার্জন ছিলো কর আরোপ ও লুন্ঠন, ক্রেডিট সিস্টেম ও পুঁজিবাদের উপর তারা সামান্যই নির্ভর করতো। অন্যদিকে ইউরোপের রাজা ও সেনাপতিরা ক্রমশ বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করতে শুরু করলো। সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফ্রক কোট ও হ্যাট পরা ব্যাংকার ও বণিকেরা স্বর্ণসজ্জিত ও উজ্জ্বল বর্ম পরা রাজা ও অভিজাতদের পরাজিত করে৷

১৪৮৪ সালে কলম্বাস পর্তুগালের রাজার কাছে নৌঅভিযানের জন্য অর্থায়নের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিনি তা ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় নাকচ করে দেন। কিন্তু বর্তমান দিনের নতুন উদ্যোক্তাদের মত তিনি হাল ছেড়ে দেন নি৷ এরপর তিনি স্পেনের শাসক ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলার কাছে যান। ইসাবেলা তাকে অর্থায়ন করতে সম্মত হন এবং কলম্বাসের আবিষ্কারগুলি স্প্যানিয়ার্ডদের আমেরিকা জয় করতে সক্ষম করেছিলো। কিন্তু এই অভিযানগুলি ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ, অনেক অভিযাত্রী খালি হাতে ইউরোপ ফিরে এসেছিলো কিছু আবিষ্কার না করেই। অনেক জাহাজ আর ফিরেই আসেনি৷ একজন একক বিনিয়োগকারী সকল অর্থ একটি দুর্বল জাহাজে বাজি ধরার পরিবর্তে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিগুলি বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করত, প্রত্যেকে তার পুঁজির একটি ছোট অংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বিনিয়োগ করতো। ফলে ঝুঁকি কমে গিয়েছিলো, কিন্তু মুনাফার তেমন হেরফের হয়নি। এমনকি সঠিক জাহাজে একটি ছোট বিনিয়োগেও আপনি কোটিপতি হয়ে যেতে পারতেন।

ক্রেডিটের নতুন শক্তির দেখা যাওয়া পেতে পারে স্পেন ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান তিক্ত সংগ্রামের মধ্যে। ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেন ছিলো ইউরোপের অত্যন্ত শক্তিশালী রাষ্ট্র, বিশাল সাম্রাজ্যের উপর প্রভাব বিস্তারকারী। নেদারল্যান্ড ছিলো ছোট এবং জলাভূমি, স্পেনের রাজার অধীনস্থ প্রাকৃতিক সম্পদহীন একটি ভূখন্ড। ক্রেডিট ছিলো ডাচদের সাফল্যের রহস্য, যুদ্ধের স্বাদ ডাচরা সামান্যই পেয়েছিলো। আমস্টার্ডাম দ্রুত মহাদেশের আর্থিক মক্কায় পরিণত হয়। ডাচরা কিভাবে আর্থিক ব্যবস্থার উপর আস্থা লাভ করেছিলো?

প্রথমত, ডাচরা নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে নিয়মিত ছিলো। দ্বিতীয়ত তাদের দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিলো। যদি কোন জার্মান বিনিয়োগকারী স্পেনে অর্থ বিনিয়োগ করতো, স্প্যানিশ রাজারা সেটা পরিশোধ করতে পারতো না কারণ তারা অর্থ বিনিয়োগ করতো যুদ্ধে, ব্যবসায় নয়। আর যদি কোন ডাচ ব্যবসায়ী অর্থ ফেরত দিতে নাও পারতো বা অস্বীকৃতি জানাতো, তার নামে ডাচ আদালতে মামলা করে অর্থ তুলে আনার সুযোগ ছিলো। কিন্তু স্পেনের আদালত এবং বিচারক স্পেনের রাজার অধীনে ছিলো, তাই মামলা আমলেও নেওয়া হতো না। এভাবেই স্প্যানিশ রাজা বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়েছেন এবং একই সময় ডাচ ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছিলেন। আর এই ডাচ ব্যাবসায়ীরাই ডাচ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলো - ডাচ সরকার নয়। ডাচ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি VOC ব্যাবসায়ীরা প্রায় দুইশো বছর ইন্দোনেশিয়া শাসন করে। ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানি হাডসন নদীতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য নদীর মুখে একটি দ্বীপে নিউ আমস্টারডাম নামে উপনিবেশ গড়ে তোলে। আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা এই উপনিবেশটির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এবং বৃটিশরা অবশেষে ১৬৬৪ সালে এটি অধিকার করে নাম রাখে নিউ ইয়র্ক। ইন্ডিয়ান এবং বৃটিশদের আক্রমণ থেকে উপনিবেশকে রক্ষার জন্য ডাচ OIC দেওয়াল নির্মাণ করেছিলো। আজ সেই দেওয়ালের ভগ্নাবশেষের উপর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয় - বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট।

সতের শতকের ক্ষত শেষ হতেই, আত্মতুষ্টি ও ব্যয়বহুল যুদ্ধের কারণে ডাচরা ইউরোপের আর্থিক এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে অবস্থান হারায়। ফ্রান্স এবং বৃটেন উপরে উঠে আসে। ফ্রান্স বৃটেনের চেয়ে অনেক বড়, অধিক ধনী, জনসংখ্যা, বৃহৎ সেনাবাহিনী ছিলো। কিন্তু বৃটিশরা আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয় এবং ফ্রান্স নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করে। বিপর্যয়ের সময় ফরাসি নৃপতির আচরণ ছিলো খুবই জঘন্য, এই বিপর্যয় মিসিসিপি বাবল নামে পরিচিত ছিল।

 যখন ১৭১৭ সালে ফ্রান্সে তালিকাভুক্ত মিসিসিপি কোম্পানি নিম্ন মিসিসিপির উপত্যকায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য নিউ অরলিন্স শহর প্রতিষ্ঠা করে, এর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোম্পানিটি অর্থায়ন করে। ১৭১৭ সালে নিম্ন মিসিসিপি উপত্যকায় জলাভূমি ও কুমির ছাড়া তেমন কিছু ছিলো না। তবু মিসিসিপি কোম্পানি অবিশ্বাস্য সম্পদ ও সীমাহীন সুযোগের গল্প ছড়িয়েছিলো। তাই শেয়ারের দাম হঠাৎ বেড়ে যায় এবং সবাই শেয়ার কিনতে থাকে এমনকি ঋণ নিয়ে হলেও। যখন সবাই বুঝতে পারে শেয়ারের মূল্য অবাস্তব এবং অস্থিতিশীল, আতংক শুরু হয়ে যায় এবং দাম হঠাৎ কমে যায়। এই ঘটনা পুরো ফ্রান্সের অর্থ ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছিলো। বড় বিনিয়োগকারীরা সময়মত শেয়ার বিনিয়োগ করে বিশাল লাভ নিয়ে অক্ষত থাকে কিন্তু ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা সব হারায় এবং কেউ কেউ আত্মহত্যা করে।

মিসিসিপি কোম্পানি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শেয়ার মূল্যকে প্রভাবিত করেছিলো এবং শেয়ার কেনার জন্য উন্মত্ততার সৃষ্টি করার কারণে মানুষ ফরাসি ব্যাংকিং ব্যাবস্থা এবং ফরাসি রাজার অর্থনৈতিক জ্ঞানের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। পঞ্চদশ লুইয়ের পক্ষে ঋণ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। ডাচদের পদ্ধতি অবলম্বন করে বৃটিশরা যখন আস্থা অর্জন করেছিলো এবং অল্প সুদে ঋণ পেতো, ফরাসীরা উচ্চ সুদেও ঋণ পেতে কষ্ট হতো৷ ১৭৮০ দশকে ষোড়শ লুই ক্ষমতায় এসে দেখেন তার বার্ষিক বাজেটের অর্ধেক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। এভাবে ফ্রান্স ১৭৮৯ এর ফরাসি বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যায়।

ভারতীয় উপমহাদেশকেও ব্রিটিশরা জয় করে নি, বরং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভাড়াটে সৈন্যরা জয় করেছিলো। কোম্পানিটি VOC কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। কেবল ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির বাহিনিসহ ভারতকে রাষ্ট্রীয়করণ করে। নেপোলিয়ন ব্রিটিশদের ঠাট্টা করে বলতেন, দোকানদারদের জাতি। তবু এই দোকানদাররা নেপোলিয়নকে পরাজিত করেছিলো, তার এত বড় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলো যেখানে সূর্য অস্ত যেত না।

ডাচ রাজ ইন্দোনেশিয়াকে ১৮০০ সালে এবং ব্রিটিশ রাজ ১৮৫৮ সালে রাষ্ট্রীয়করণ করার পরও পুঁজিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের অবসান ঘটেনি। মার্ক্স এবং অন্যান্য সামাজিক সমালোচকরা পরিহাস করে বলতেন, পশ্চিমা সরকারগুলি পুঁজিবাদী ট্রেড ইউনিয়ন হয়ে উঠছে। যেমন চীন ও বৃটেনের আফিমের যুদ্ধে (১৮৪০-৪২) বৃটিশদের অজুহাত ছিলো মুক্ত বাজারে বিশ্বাস। তাদের মতে, মুক্ত বাজার নীতিতে চীনে আফিম বিক্রিও জাস্টিফায়েড। ১৯৯৭ পর্যন্ত বৃটিশদের অধীনে থাকা হংকংকে তারা গড়ে তুলেছিলো মাদক ব্যাবসার নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে। উনবিংশ শতাব্দীতে ফ্রেঞ্চ ও বৃটিশ বিনিয়োগকারীরা মিশরের শাসকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ধার দিয়েছিলো, পরবর্তীতে বৃটিশদের ঋণের বোঝায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত মিশর বৃটিশদের আশ্রিত রাজ্য হয়ে ছিলো। গ্রীস অটোমান যুদ্ধেও বৃটিশরা গ্রীসদের পক্ষে অর্থ বিনিয়োগ করে যাতে গ্রীক অর্থনীতি স্বাধীনতার পর বৃটিশদের কাছে বন্ধক থাকে৷ তারা এত আত্মবিশ্বাসী ছিলো কারণ তারা জানতো কোন বিদেশী ঋণগ্রাহক ঋণের অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করলে রাণীর সেনাবাহিনী তাদের থেকে অর্থ ফিরিয়ে আনবে। এই কারণে আজ একটি দেশের ক্রেডিট রেটিং (ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা নির্দেশক) প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

মুক্তবাজারের ধারণা হলো যে, রাজনীতিতে মূলধনের প্রভাব থাকবে কিন্তু রাজনীতি মূলধনে প্রভাব ফেলবে না। এই দৃষ্টিতে সবচেয়ে বিচক্ষণ অর্থনৈতিক পলিসি হচ্ছে রাজনীতিকে অর্থনীতির বাইরে রাখা, নূন্যতম করারোপ, বাজার শক্তিতে এর নিজস্ব গতিপথে অগ্রসর হতে দেওয়া। এই মুক্তবাজার মতবাদ বর্তমানে খুবই প্রচলিত এবং পুঁজিবাদী বিশ্বাসের প্রভাবশালী বিকল্প। মুক্তবাজারের কট্টর প্রবক্তারা যেমক্ন বিদেশে সামরিক অভিযানের নিন্দা করেন, তেমন নিজ দেশের বিভিন্ন কল্যাণ বিষয়ক উদ্যোগের বিরুদ্ধেও তীব্রভাবে নিন্দা করে থাকে। তারা সরকারই একই পরামর্শ দেয়, 'কিছুই করো না।' কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাজার কখনো জালিয়াতি, চুরি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কোন সুরক্ষা দেয় না৷ তাই আইন প্রণয়নকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ, প্রতারকদের শাস্তির ব্যবস্থা করা রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাজ। নাহলে পরবর্তীতে বিশ্বাস কমে যাবে, ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে, অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিবে। যারা ১৭১৯ এর মিসিসিপি বিপর্যয় এর কথা ভুলে গিয়েছে, ২০০৭ এর আমেরিকার হাউসিং বিপর্যয় এবং আসন্ন সংকট ও মন্দা তাদের এটি মনে করিয়ে দেয়।

মুক্তবাজারে যদি কোন লোভী উদ্যোক্তা কর্মচারীদের অন্যায়ভাবে বেতন কম দেন তাহলে কর্মচারীরা কি করবে? উত্তর হলো মুক্তবাজারই তাদের সুরক্ষিত করবে, দক্ষ কর্মচারীরা ভালো বেতনে প্রতিযোগী উদ্যোক্তার কাছে যাবে। এই তত্ত্ব বুলেটপ্রুফের মত শুনালেও বাস্তবে বুলেটগুলি সহজেই ভেদ করবে। যদি কোন একটি কর্পোরেশন দেশের সকল কারখানা নিয়ন্ত্রণ করে অথবা সকল কারখানার মালিকরা যদি একসাথে মজুরি কমানোর ষড়যন্ত্র করে, তাহলে কর্মচারীরা চাকরি বদল করে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না। আধুনিক যুগে প্রথম থেকে আটলান্টিক দাস ব্যাবসার মাধ্যমে ইউরোপীয় পুঁজিবাদের উত্থান ঘটেছিলো। মধ্যযুগে ইউরীপে চিনি ছিল বিরল বিলাসিতা। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ১০ মিলিয়ন আফ্রিকান ক্রীতদাস আমেরিকা থেকে আমদানি করা হয়েছিলো যাদের ৭০% আখ চাষে নিয়োজিত করা হয়েছিলো, যারা সংক্ষিপ্ত ও শোচনীয় জীবনযাপন করতো, আফ্রিকার অভ্যন্তর থেকে আমেরিকা আসতে আসতে লক্ষ লক্ষ দাস মারা যেত, শুধুমাত্র যাতে ইউরোপীয়রা তাদের মিষ্টি চা আর ক্যান্ডি উপভোগ করতে পারে, আর যাতে চিনি ব্যাবসায়ীরা বিপুল মুনাফা লাভ করতে পারে। এই আটলান্টিকের দাস ব্যবসা কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি ঘৃণা থেকে গড়ে উঠে নি, এর দায় সম্পূর্ণ লোভ ও পুঁজিবাদের। পৃথিবীর অসংখ্য অমানবিক অপরাধ ও অপকর্মের সাথে আধুনিক অর্থনীতিরও প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। লোভ ও শীতল উদাসীনতায় পুঁজিবাদ লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে।

এটিই মুক্তবাজার পুঁজিবাদের মন্দ দিক, এটি মুনাফা ন্যায্য উপায়ে বিতরণ নিশ্চিত করতে পারে না। ২০১৪ সালে আমেরিকার প্রবৃদ্ধি ১৫০০ সালের থেকেও অনেক বেশি ছিলো। কিন্তু এটি এত অসমভাবে বন্টিত হয়েছে যে অনেক আফ্রিকান ও ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিক প্রচন্ড পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে এসে তাদের ৫০০ বছর আগের পূর্বপুরুষ থেকেও কম খাবার পেত। পুঁজিবাদের রয়েছে এইসব সমালোচনার দুইটি উত্তর। বিশ্বকে ভিন্নভাবে পরিচালনার একমাত্র আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিলো কম্যুনিজম, যেটি এখন আর কেউ ব্যর্থতার কারণে পরিচালনা করতে চায় না। দ্বিতীয়ত, আমাদের ধৈর্যের প্রয়োজন। আটলান্টিকের দাস বণিজ্য ভুল হলেও, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা যদি আরেকটু অপেক্ষা করতাম, প্রত্যেকেই আরো বড় অংশ পেতাম।

কৃষি বিপ্লবের মত আধুনিক অর্থনীতিও হয়তো বিশাল জালিয়াতি৷ ইকোনমিক পাই কি অনির্দিষ্টকাল ধরে বৃদ্ধি পেতেই থাকবে? রিসোর্স সীমিত। তবে সামনে কি অপেক্ষা করছে?



Popular Posts