The Rules for Rulers

 



আপনি আপনার দেশের অনেক সমস্যাই জানেন এবং কিভাবে সলভ করা যায় তা নিয়ে পূর্ণ ধারণা আছে৷ কিন্তু অতি সহজ সমাধান থাকতেও কেন রাষ্ট্রব্যবস্থা পদক্ষেপ নেয় না এটা ভেবে রাগান্বিত হয়ে যান। যেমন SUST এর VC কে তো অপসারণ করলেই পারতো, বা কেন রেলওয়ের ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর চাকরিতে ৮০% কোটা কেন। আপনি হয়তো নিজেকে প্রশ্ন করেন এমন সেলফিশ, সেল্ফ ডেস্ট্রাক্টিভ, হ্রস্বদৃষ্টি পদক্ষেপ রাষ্ট্রব্যবস্থা কেন নেয়৷ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষরা কি গর্দভ? নাকি অন্য ঘটনা আছে?


দূর থেকে সিংহাসন বা প্রেসিডেন্টের পদ যতটা সর্বশক্তিমান মনে করা হয়, বাস্তবে তা নয়। আপনি যখন শাসক হবেন, আপনার যেমন ক্ষমতা থাকবে, ক্ষমতাও আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রথম আইডিয়া হলো, কেউ একা শাসন করে না৷ একজন শাসকের সৈন্যদল পরিচালনার জন্য কাউকে দরকার, রাজস্ব আদায়ের জন্য কাউকে দরকার, আইন প্রয়োগের জন্য কাউকে দরকার। এরা শাসকের ক্ষমতার চাবিকাঠি। একজন শাসক হয়ে আপনি যেসব উন্নয়নমূলক কাজ করতে চান, পারবেন না যদি আপনার চাবিকাঠিরা আপনাকে মান্য না করে৷

Dictatorship দিয়ে শুরু করি, এরপর গণতন্ত্রে যাবো। Dictatorship এ আপনার ক্ষমতার চাবিকাঠি খুব বেশি নয় - ডজনখানেক জেনারেল, আমলা, স্থানীয় নেতা - এদের নিজের পকেটে রাখুন এবং ক্ষমতা আপনার। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না - তাদের অসন্তুষ্ট করলে তারা আপনাকে replace করবে।

সব শাসকের চাবিকাঠির সংখ্যা সমান নয় এবং এজন্যই বিভিন্ন দেশের শাসনব্যাবস্থা ভিন্ন ধরণের হয়৷ তবে চাবিকাঠি কমই হোক বা বেশি, আইডিয়াগুলো সেম। দ্বিতীয় আইডিয়া হলো এই চাবিকাঠিদের নিজের বশে রাখার জন্য রাজকোষ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ শাসকের প্রকৃত দায়িত্ব এটি, বুঝে উঠা যে কিভাবে রাজস্ব আদায় এবং distribute করতে হবে - সাথে চাবিকাঠিদেরও সন্তুষ্ট রাখতে হবে, নাহলে যে তাসের ঘরের উপর আপনার গদি আছে, তা ভেঙ্গে পড়তে পারে।

এখন আপনি আশাবাদী, দয়ালু শাসক হতে চান যিনি নিজের জনগণকে সাহায্য করতে চান, তাদের ভালো একটা জীবন নিশ্চিত করতে চান বাহুবলীর মত। কিন্তু মনে রাখবেন - আপনার চাবিকাঠিদের loyal রাখতে হবে৷ আপনার রাজকোষের ভান্ডার সীমিত। কাজেই যে সম্পদ আপনি জনগণের জন্য ব্যয় করছেন, মনে রাখবেন সেটা আপনি চাবিকাঠিদের loyalty এর জন্য ব্যয় করছেন না। কাজেই ডিক্টেটরসশিপে সঠিক কাজ করা, জনগণের সেবা করা আপনার প্রতিদন্দ্বীকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেয়। কারণ আপনি যখন সম্পদ দিয়ে মানুষের জন্য রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল বানাচ্ছেন, আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী চাবিকাঠিদের সেই সম্পদের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের করে নিচ্ছেন। এমনকি আপনি যদি সবচেয়ে loyal, angelic চাবিকাঠিদেরও নিয়ে আসেন, তাদেরও আপনার মত একই সমস্যা ফেস করতে হয়, শুধু এক ধাপ নিচে। তাদের নিচেও চাবিকাঠি আছে যাদেরকে তাদের ম্যানেজ করতে হয়৷

কাজেই আপনাকে সম্পদ ব্যয় করতে হবে নিজের অবস্থান শক্তভাবে ধরে রাখার জন্য। বিশ্বস্ত বা গর্দভ চাবিকাঠিরা হয়তো আপনার সাথে থাকবে সবসময় কিন্তু স্মার্ট চাবিকাঠিরা সর্বদা balance of power এর দিকে তাকিয়ে থাকবে, আপনি তাদের সন্তুষ্ট রাখতে না পারলেই পক্ষ চেঞ্জ করে ফেলবে। So, buy all the loyalty you can. This is self sustaining core of power.

এখন শাসকের যদি অনেক চাবিকাঠি থাকে, তাহলে অন্য সমস্যা উদয় হয় - কারণ সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব না। শাসকের যত বেশি চাবিকাঠি থাকবে, তার শাসনামল তত সংক্ষিপ্ত হবে৷ এখানেই আসে তৃতীয় আইডিয়া, চাবিকাঠি কম রাখতে হবে। যদি একজন চাবিকাঠির স্কিল আপনার দরকার না হয়, kick him out. একটা সাকসেসফুল coup এর পর নতুন শাসক এসে আগের শাসকের চাবিকাঠিদের নিজের দলে টানতে পারে, আবার যারা তাকে coup এ হেল্প করেছে, তাদেরও kick out করতে পারে। কারণ ক্ষমতা অর্জনের জন্য চাবিকাঠি আর ক্ষমতা sustain করার জন্য চাবিকাঠি এক নয়। দিনশেষে অপ্রয়োজনীয় চাবিকাঠির পিছে ব্যয় করা জনগণের উন্নয়নে সম্পদ ব্যবহার করার মতই - asset wasted on irrelevant.

কাজেই যে শাসক সঠিক চাবিকাঠিকে হাতে রাখবে, রাজকোষ বুদ্ধিমত্তার সাথে নিয়ন্ত্রণ করবে, অপ্রয়োজনীয় খরচ কেটে ফেলবে, অপ্রোয়জনীয় চাবিকাঠি মেরে ফেলবে - তার লম্বা এবং সাফল্যময়(!) শাসনামল যাবে।

এখন আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন মধ্যযুগীয় রাজা থেকে শুরু করে আধুনিক dictatorship, জনগণের ভালো চাইলেও কেন করা সম্ভব না structural difficulty এর জন্য এবং গণতন্ত্রকে বেছে নিলেন। এখন আপনি হয়তো utopian dream দেখা শুরু করেছেন কিন্তু আইডিয়াগুলো কিন্তু আগের মতই। প্রথম আইডিয়া অনুযায়ী, no man rules alone, এবং democracy তে তো আরো নয়৷ প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীদের সিনেট এবং পার্লামেন্টের সাথে নেগোসিয়েট করতে হয় এবং vice versa. এবং চাবিকাঠিদের তাদের নিচের চাবিকাঠি ম্যানেজ করতে হয়।

একটি সুসজ্জিত গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় ক্ষমতা অনেকের মাঝে বিভাজিত এবং সেটা জোর নয়, কথা দিয়ে আদায় করতে হয়। আপনার হাজার হাজার লাখ লাখ সাপোর্টার লাগবে যারা নির্বাচনের দিনে আপনাকে পছন্দ না করলেও অন্তত আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অধিকতর পছন্দ করে। এখন যেখানে ক্ষমতা এত বিভাজিত এবং এত ভোটার, দ্বিতীয় আইডিয়া মেইনটেইন করা সত্যিই কঠিন - loyalty কেনা। উমম, আসলে না - ভোটারদের individually চিন্তা না করে আপনাকে ব্লক হিসেবে চিন্তা করতে হবে - বৃদ্ধ, বিজনেস গ্রুপ, গরীব শ্রেণী, সংখ্যালঘু ইত্যাদি। এই ব্লকগুলোকে আপনি পুরষ্কৃত করতে পারেন এবং নিজের দিকে টানতে পারেন।

বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক সিস্টেমগুলোতে খুবই কমপ্লেক্স tax code এবং আইন আছে, কিন্তু সেটা এক্সিডেন্ট বা কাকতালীয় নয়, বরং এই ব্লকগুলোতে পুরষ্কৃত করার জন্য এবং শাসককে ক্ষমতায় রাখার জন্য। কৃষকের জন্য ভর্তুকির সাথে দেশের খাবারের সংযোগ খুবই সামান্য, কিন্তু কৃষক গ্রুপের ভোটের সাথে অনেক। যেসব দেশে কৃষকের ভোট ইলেকশনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় না, সেসব দেশে কৃষি ভর্তুকি নেই। একটা ব্লক যদি ভোট না দেয় - যেমন অপ্রাপ্তবয়স্ক, সংখ্যায় যতই হোক না কেন তাদের খুশি করতে সম্পদ ব্যবহারের দরকার নেই, irrelevant. কাজেই দেখতে পারছেন, তৃতীয় আইডিয়াটা dictatorship এ যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, গণতন্ত্রেও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে গণতন্ত্রেও আপনার প্রভাবশালী ব্যাক্তি চাবিকাঠিদের লাগবে কারণ তাদের টাকা বা প্রভাব আপনাকে ক্ষমতায় রাখবে। যদিও আপনি তাদেরকে সরাসরি রাজকোষের সম্পদ অফার করতে পারবেন না, আপনি তাদের সুবিধার জন্য লুপহোল তৈরী করতে পারেন - যেমন তাদের পছন্দের আইন পাস করা, জেল থেকে মুক্ত করা, ট্যাক্স মওকুফ করা ইত্যাদি। আপনি চাইলে ন্যায় পথ বেছে নিতে পারেন এবং বড় চাবিকাঠিদের ইগনোর করতে পারেন - কিন্তু তখন আপনাকে এমন প্রতিদন্দ্বীর সাথে লড়তে হবে যে আপনার ফিরিয়ে দেওয়া বড় চাবিকাঠিদের বাগে এনেছে - good luck with that. বেসিক্যালি আপনার কাজ হলো আপনার চাবিকাঠিদের interest কে ব্যালেন্স করা - এভাবেই আপনি আপনার কার্যালয়ে থাকবেন।

এখন একটু ট্যাক্সের ব্যাপারে আসা যাক। দ্বিতীয় আইডিয়া অনুযায়ী আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে কিভাবে রাজকোষ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনি যদি গণতান্ত্রিক দেশের শাসক হন, যারা পর্যাপ্ত উপার্জন করে না, তারা ট্যাক্স তো দেবেই না বরং ভর্তুকি পাবে - যেটা এভারেজ ট্যাক্স কমিয়ে আনে। কিন্তু dictatorship এ আপনার জনগণকে খুশি করার দরকার নেই, তাদের থেকে চড়া রাজস্ব আদায় করে শুধু চাবিকাঠিদের দেবেন loyalty কেনার জন্য।

গণতন্ত্রে জনগণ যত productive, তত ভালো। এজন্য শাসকরা বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা, হাসপাতাল তৈরী করে - এজন্য নয় তাদের দিল উদার - বরং সেটা প্রডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য। প্রডাক্টিভিটি বাড়লে রাজস্ব বাড়ে তথা চাবিকাঠিদের প্রাপ্য(!) ভাগ বাড়ে, যদিও তারা dictatorship এর থেকে কম পার্সেন্টেজ পায়। এইজন্য গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের জীবনমান বৃদ্ধি পায় ডিক্টেটরশিপ থেকে। তাই আমরা এমন এক দুনিয়ায় বাস করি যেখানে "সেরা" স্মার্ট গণতন্ত্র stable, "নিকৃষ্ট" ধনী ডিক্টেটরশিপ stable, তবে বিপ্লবের সুযোগ সবসময়েই থাকে।

যদি কোন ডিক্টেটরশিপ দেশে স্বর্ণ, তেল ইত্যাদি রিসোর্সের উপর গভীরভাবে অর্থনীতি নির্ভর করে, সেখানে ডিক্টেটর শুধু পোর্ট থেকে খনি আর রাজপ্রাসাদ থেকে এয়ারপোর্টে রাস্তা বানাবে৷ যে ডিক্টেটরের খনিজ সম্পদ নাই, অবশ্যই সে পূর্বে বর্ণিত উপায়ে গরীব কৃষক বা শ্রমিকদের থেকে রাজস্ব আদায় করবে। জনগণ চুপ থাকে এজন্য নয় যে তারা এর সাথে সহমত বা ভীত, কারণ ক্ষুধার্ত, disconnected, অশিক্ষিত জনগণ ভালো বিপ্লব করতে পারে না। রাজপ্রাসাদের ফটক ভেঙ্গে জনগণের ডিক্টেটরকে উৎখাত করা একটা রোমান্টিক ফ্যান্টাসি - জনগণ তখনই শাসককে উৎখাত করে যখন আর্মি তাদেরকে উৎখাত করতে দেয়, কারণ শাসক চাবিকাঠিদের খুশি রাখতে পারে নি এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। জনগণ শাসককে replace করে নি, চাবিকাঠিরা - জেনারেল, আমলা, স্থানীয় নেতারা জনগণকে ব্যবহার করে করেছে। এজন্যই stable dictator রা জনগণকে কখনো খুশি করে নি, চাবিকাঠিদেরকে করেছে।

অন্যদিকে, গণতন্ত্রে coup করা সহজ নয়, আর এখানে সবচেয়ে বড় সম্পদ খনিজ সম্পদ নয়, বরং জনগণের প্রোডাক্টিভিটি, ডিক্টেটরশিপের মত করে বিশাল রাজস্ব আদায় করাও সম্ভব না। তবে সিনারিও চেঞ্জ হতে পারে যখন একটা গণতান্ত্রিক দেশ গরীব হয়, বা অর্থনীতিতে জনগণের প্রোডাক্টিভিটি থেকে খনিজ সম্পদের অবদান অনেক বেশি। তখন coup করার সুযোগ এবং সাফল্য সম্ভাবনা বাড়ে, worth the risk.

এই তিনটা আইডিয়া শুধু এটাই এক্সপ্লেন করে না কেন মানুষ ক্ষমতায় গেলে দানব হয়ে উঠে, যুদ্ধ থেকে বিদেশী অনুদান, রাজবংশের কাজ থেকে দুর্নীতি সবই ফুটিয়ে তোলে। আপনি হয়তো politics নিয়ে disgusted হতে পারেন, এবং পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে চাইতে পারেন, কিন্তু পারবেন না, কারণ শাসক নানা অবয়বে আসে। রাজা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী নয় শুধু - ডীন, ডন, মেয়র, চিফও। গুগলের CEO ই বলুন বা নিউমার্কেট বণিক সমিতির চেয়ারম্যান - সবাইকেই এই তিনটা আইডিয়া মাথায় রেখে চলতে হবে। আপনি এই সিস্টেম থেকে পালাতে পারবেন না। আর আপনি যদি কোনদিন সমাজে পরিবর্তন আনতে চান, সবার পূর্বে শূন্যতম আইডিয়া হলো - ক্ষমতা ছাড়া আপনি কিছু করতে পারবেন না৷

acknowledgement: CGP Grey

Popular Posts